গত ঈদে দেশজুড়ে বরবাদ চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেয়েছে ইতোমধ্যে ব্যবসাসফল হয়েছে চলচ্চিত্রটি। দেশের সীমানা পেরিয়ে ইউরোপ আমেরিকার বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহেও ছবিটি মুক্তি পেয়েছে।সশাকিব খান অভিনীত যেমন একদিকে নানা প্রশংসা পাচ্ছে অন্যদিকে এর ভায়োলেন্স অর্থাৎ নৃশংসতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
যেহেতু এখন সেন্সর বোর্ড নেই, তাই দৃশ্য কর্তনের প্রশ্নও নেই, ভায়োলেন্স থাকতেই পারে।
কিন্তু সেটা কোন বয়সী দর্শকদের জন্য দেখার উপযোগী সেটা উল্লেখ করে দেওয়া প্রয়োজন- এই দায়িত্ব চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ডের। বরবাদের ক্ষেত্রে গ্রেড নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেননা পরিচালক নিজেও বারবার একাধিক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এটি একটি ভায়োলেন্স পরিপূর্ণ সিনেমা। তারপরেও কেন সব বয়সীদের উন্মুক্ত সার্টিফিকেট পেয়েছে বরবাদ, এমনই প্রশ্ন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড-এর ওয়েবসাইট অনুসারে, ২০২৩ সালের ৫২ নং আইন Censorship of Films Act, 1963 রহিতক্রমে সময়োপযোগী করে পুনঃপ্রণয়ণকল্পে প্রণীত হয় যা বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন, ২০২৩ নামে অভিহিত হয়।
এই আইন দ্বারা পরিচালিত হয়ে চলচ্চিত্রগুলির সার্টিফিকেশনের পদ্ধতি, চলচ্চিত্রের বিভিন্ন অংশের জন্য বর্ণনা ও শ্রেণীবিন্যাস, যেমন উপস্থাপনার ধরন, ভাষা, হিংসাত্মকতা ইত্যাদি উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও এই আইনের আওতায় চলচ্চিত্র প্রকাশের জন্য বিভিন্ন নির্দেশনা ও পরিস্থিতি নির্ধারণ করা হয়েছে যা কিনা গ্রেডিং সিস্টেমের আকারে চলচ্চিত্রকে মুক্তি দেয়া যাবে।
এই আইন অনুযায়ী বরবাদ চলচ্চিত্রকে গ্রেডিং করা হয়েছে, প্রশ্ন উঠেছে সেখানেই।
বরবাদ U গ্রেড পায়। এতে অনেক চলচ্চিত্রকর্মীই বিস্ময় প্রকাশ করেন। তাদের মতে এটি একটি অ্যাডাল্ট বা পূর্ণ বয়স্ক চলচ্চিত্র। এটাকে কোনো কর্তন ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যেত কিন্তু U গ্রেডের পরিবর্তে A গ্রেড দেওয়া প্রয়োজন ছিল। এটি সম্পূর্ণ সার্টিফিকেশন বোর্ডের ভুল সিদ্ধান্ত বলেও তারা উল্লেখ করছেন।
চলচ্চিত্র সমালোচক রাশেদুজ্জামান রাকিব এক ভিডিও বার্তায় বলছেন, 'বরবাদ চলচ্চিত্রটি একটি ভায়োলেন্সপূর্ণ চলচ্চিত্রটি। এটি সব বয়সের জন্য উন্মুক্ত করা ঠিক হয়নি। এতো নৃশংসতা সব বয়সের উপযোগী নয়। বরবাদ চলচ্চিত্রটি পূর্ণ বয়স্কদের উপযোগী চলচ্চিত্র। এটিকে A গ্রেড-এর সার্টিফিকেট দেওয়া প্রয়োজন ছিল।'
তবে চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড বলছে সবার মতামতের ওপর ভিত্তি করেই চলচ্চিত্রটিকে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড-এর সদস্য কাজী নওশাবা আহমেদ বলেন, 'আমরা সিনেমাটি দেখেছি, এরপর আমাদের সদস্যরা সকলেই মত দিয়েছেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ওপর ভিত্তি করেই বরবাদকে U সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে।'
ছবিটিকে কি U গ্রেড দেওয়া যথার্থ হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে কাজী নওশাবা বলেন, 'এখানে আমার মন্তব্য দেওয়া ঠিক হবে না। এ বিষয়ে আমি চুপ থাকতে চাই।'
চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ডের সদস্য ইকবাল কবির জুয়েল সংস্থাটির সদস্য হিসেবে মন্তব্য করতে রাজি নন। তিনি বলেন, 'আমি চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ডের সদস্য হিসেবে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। আপনি যদি একজন চলচ্চিত্র কর্মী হিসেবে আমার অভিমত জানতে চান তাহলে আমি বলতে পারি।'
ইকবাল কবির জুয়েল পেশাগতভাবে চলচ্চিত্র সম্পাদনা করেন। তার কাছে চলচ্চিত্র কর্মী হিসেবেই মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, 'দেখেন এ ধরনের চলচ্চিত্র বন্ধ হওয়া উচিত। এসব মস্তিষ্ক বিকৃতকারী চলচ্চিত্র। সবাইকে আহবান করবো এমন চলচ্চিত্র যেন না নির্মাণ করা হয়। চলচ্চিত্রে যা দেখানো হয়েছে তা অনেকাংশেই বাস্তবে ঘটে না, আমরা নারীর প্রতি সহিংস নই। আইন শৃঙ্খলাবাহিনী বিপ্লবের পর আবার তাদের কাজ শুরু করেছে। ফলে দেখানো জিনিস অনেকাংশেই বেমানান।'
ইকবাল কবির জুয়েল আরো বলেন, 'এই ছবি সার্টিফিকেশন বোর্ডে জমা দেওয়ার পর কর্তন নিয়ে কথা উঠেছিল, তখন টিশার্ট পরে অনেকেই পথে নেমেছিল। তারা আনকাট দেখতে চান। এই ছবিতে আনকাট ধর্ষণ দৃশ্য রয়েছে, আমার প্রশ্ন হলো আপনারা কি আনকাট ধর্ষণ দেখতে চান? শুধু বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে এমন ছবি নির্মাণ বন্ধ হওয়া উচিত। কেননা সমাজে এসব এসবের নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে।'
তবে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছবিটিকে কর্তন ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যেত। এ এক্ষেত্রে শুধু গ্রেডিং U এর স্থলে A করে দিতে হতো। এতে করে কর্তন ছাড়াই সিনেমাটি মুক্তি পেত ও কমবয়সীদের জন্য সিনেমাটি দেখা নিষেধ থাকতো।
দর্শকদের জন্য উপযুক্ততার উপর ভিত্তি করে চলচ্চিত্রগুলিকে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। কারণ এতে যৌনতা, সহিংসতা, পদার্থের অপব্যবহার, অশ্লীলতার ব্যবহার, অথবা শিশু বা কিশোর-কিশোরীদের জন্য সাধারণত অনুপযুক্ত বলে মনে করা হয় এমন অন্যান্য বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয়। বেশিরভাগ দেশেই এমন কিছু রেটিং সিস্টেম রয়েছে যা সার্টিফিকেশন , শ্রেণীবিভাগ , সার্টিফিকেট বা রেটিং নামে পরিচিত বিভিন্ন ধরণের নির্ধারণ জারি করে। এটা সম্প্রতি বাংলাদেশে চালু হয়েছে।
‘বরবাদে’ শাকিব ফের জুটি বেঁধেছেন ইধিকা পালের সঙ্গে। এতে অভিনয় করেছেন ফজলুর রহমান বাবু, মামুনুর রশীদ, ইন্তেখাব দিনার, শহীদুজ্জামান সেলিম, মিশা সওদাগর প্রমুখ।